Sunday, July 14, 2013

মোহাম্মদ কাজল

মোহাম্মদ কাজল। কাজল নামেই যিনি সর্বাধিক পরিচিত। জীবন ও জীবিকার তাগিদে প্রবাসে জীবন-যাপন করলেও সমাজ ও দেশমাতৃকার জন্য এই তরুণ যুবকটির অবদান সত্যিই অনস্বীকার্য। দেশের অসহায় ও ক্ষুধাপীড়িত মানুষদের পাশে গিয়ে দাঁড়ানোই ছিল তাঁর আজন্ম স্বপ্ন। সেই স্বপ্ন বাস্তবায়নের প্রত্যয়েই তিনি অন্যের চাকুরীর পরিবর্তে ব্যবসাকেই জীবিকার মাধ্যম হিসেবে বেচে নিয়েছিলেন। স্থানীয় বসুরহাট বাজারে শতরূপানামের প্রতিষ্ঠিত ব্যবসা প্রতিষ্ঠান দিয়ে তাঁর কর্মজীবন শুরু হলেও তাঁর স্বপ্ন বাস্তবায়নের জন্য তা ছিল নিতান্তই অপ্রতুল। অবশেষে তাঁর লালিত স্বপ্নকে বাস্তবে রূপান্তরিত করার লক্ষ্যেই তিনি ১৯৯৫ সালের জানুয়ারী মাসে পাড়ি দেন সুদূর আমেরিকায়। যেখানে আজ সে একজন অন্যতম সফল ব্যবসায়ী। পাশাপাশি জন্মভূমির জন্যও দৃষ্টান্ত স্থাপনকারী একজন কৃর্তীমান সমাজ সেবক।


জন্ম ও শিক্ষা: পৈত্রিক নিবাস নোয়াখালী জেলার কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার মোহাম্মদনগর গ্রামে ১৯৭২ সালের ৭ জানুয়ারি জন্মগ্রহণ করেন মোহাম্মদ কাজল। পিতা আলহাজ্ব সুলতান আহাম্মদ এবং মাতা আনোয়ারা বেগম। তার বাবা আলহাজ্ব সুলতান আহমেদ বসুরহাট বাজারের একজন নামকরা প্রতিষ্ঠিত ব্যবসায়ী। তিনি বাবা-মায়ের ২য় সন্তান। প্রকৃতির অকৃত্রিম মায়া আর মমতায় ঘেরা গ্রাম মোহাম্মদনগরেই কেটেছে তাঁর শৈশব ও কৈশর। সেখানে মানিকপুর হাইস্কুলে তাঁর প্রাথমিক শিক্ষাজীবন শুরু হয় এবং একই স্কুল থেকে ১৯৮৮ সালে তিনি কৃতিত্বের সাথে এসএসসি পাস করেন। অতঃপর বসুরহাট সরকারী মুজিব কলে থেকে ১৯৯০ সালে এইচএসসি এবং ১৯৯২ সালে বিএ পাস করেন। বর্তমানে বসুরহাট টিএন্ডটি রোডে তার তৈরি আধুনিক বহুতল বাড়িতে তার পরিবারের সদস্যরা বসবাস করছেন। এছাড়া পৌর মার্কেট সংলগ্ন নিজেদের খাজা মার্কেট ও খাজা বেকারী তার বাবা ও ছোট ভাইয়েরা সুনামের সাথে পরিচালনা করে আসছেন।

ব্যক্তিগত, পারিবারিক ও সামাজিক জীবনে অর্থের প্রয়োজনীয়তা ছাত্রজীবন থেকেই তিনি তীব্রভাবে উপলব্দি করতে থাকেন। তাই সময়ের দাবীতেই শিক্ষা জীবনের ইতি টেনে ১৯৯২ সালে বসুরহাট বাজারে শতরূপানামে ব্যবসা প্রতিষ্ঠান পরিচালনার মধ্য দিয়েই তিনি কর্মজীবনের সূত্রপাত করেন। কিন্তু ঐ ব্যবসায় তার প্রয়োজন আর লালিত স্বপ্ন বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে ছিল অসঙ্গতিঁপূর্ণ। অবশেষে ১৯৯৫ সালে তিনি পাড়ি জমান আটলান্টিকের ওপারে স্বপ্নের দেশ আমেরিকায়। অনেক কষ্ট আর ত্যাগ তিতিক্ষার পর ১৯৯৮ সালে তিনি আমেরিকার মেরিল্যান্ড স্টেটের বাল্টিমোর শহরে সারাটোগা রোডে বিছমিল্লাহ বডি ওয়েল এন্ড ভ্যারাইটি ষ্টোরনামে নিজের ব্যবসা প্রতিষ্ঠান চালু করেন। কালক্রমে তিনি আরো বড়ো আকারের দুটি ব্যবসা প্রতিষ্ঠান চালু করেন। যেগুলোর নাম ফাতেমা মিনি মার্টএবং সারাটোগা বিউটি এন্ড বারবার সাপ্লাই। বিছমিল্লাহপড়ে কর্ম শুরু করলে তার প্রতি আল্লাহ পাকের রহমত ও বরকত বর্ষিত হতে থাকে। যা বাল্যকালে মা-বাবা এবং মক্তবে ধর্মীয় শিক্ষা গ্রহণ করতে গিয়ে শিখানো হয়। তার এক উজ্জল দৃষ্টান্ত স্থাপিত হয়েছে তরুণ যুবক মোহাম্মদ কাজলের জীবনে। বিছমিল্লাহনাম দিয়ে শুরু করা ব্যবসা প্রতিষ্ঠানই তার ভাগ্যের চাকাতে পারোদমে ঘুরিয়ে দিয়েছে। সু-প্রসন্ন করে দিয়েছে তাঁর লালিত স্বপ্ন বাস্তবায়নের পথ ও গতি। চাওয়া-পাওয়ার অনেক সিঁড়ি ডিঙ্গিয়ে আজ সে একজন সফল পুরুষ। বাবা মায়ের গর্বিত সন্তান।

পারিবারিক জীবন: নোয়াখালী জেলার বেগমগঞ্জ উপজেলার আমেরিকান প্রবাসী জনাব নূর হোসেনের ৫ম কন্যা ফাতেমা আক্তার সুমীর সাথে ১৯৯৯ সালের ১১ নভেম্বর মোহাম্মদ কাজল বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন। ২০০৫ সালের ১৮ ফেব্রুয়ারি তাদের কোল জুড়ে আসে একমাত্র পুত্র সন্তান রায়হান আহমেদ। বর্তমানে সে আমেরিকার মেরিল্যান্ড স্টেটে আর রাহমান ইসলামিক স্কুলএর ছাত্র। মোহাম্মদ কাজল পরিবারের ৭ ভাই-বোনের মধ্যে ২য়। তার বড় এক বোন। ছোট তিন বোনসহ মোট চার বোনই ব্যক্তিগত জীবনের বিবাহিত এবং সুখী জীবনের অধিকারীনি। ছোট দুই ভাই নজরুল ইসলাম বর্তমানে আমেরিকায় ভাই ব্যবসা দেখাশুনা করছেন  এবং কামরুল ইসলাম স্বপন বসুরহাটে প্রতিষ্ঠিত ব্যবসায়ী।

সমাজসেবা: মোহাম্মদ কাজলের সার্বিক পৃষ্ঠপোষকতায় পরিচালিত সংস্থাগুলোর মধ্যে অন্যতম হচ্ছে নিজ বাবা-মায়ের নামে প্রতিষ্ঠিত আলহাজ্ব সুলতান-আনোয়ারা ফাউন্ডেশন। প্রতিষ্ঠার পর পরই তার মাধ্যমে তিনি সখিনা খাতুন (দাদী)র নামে ফ্রি ক্লিনিক চালু করেন। যার মাধ্যমে প্রতি শুক্রবারে বিশেষজ্ঞ ডাক্তারদের মাধ্যমে গরীব ও অসহায়দের বিনামূল্যে চিকিৎসাসেবা প্রদান করা হয়। ২০০৫ সাল থেকে অদ্যাবধি এই কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে সূচারুরূপে। আমাদের শিক্ষার মানোন্নয়ন তথা শিক্ষার্থীদের উৎসাহিত করার লক্ষ্যে বসুরহাট একাডেমীরমাধ্যমে ২০০৬ সালে তিনি চালু করেনআলহাজ্ব সুলতান আনোয়ারা স্কলারশীপ। পূর্বে অন্য একটি প্রবাসী সংস্থা ঐ বৃত্তি প্রদান শুরু করলে তিনিও ঐ প্রকল্পের সাথে সম্পৃক্ত ছিলেন। পরে ঐ সংস্থাটি হাত ঘুটিয়ে নিলে ২০০৬ সাল থেকে মোহাম্মদ কাজল এককভাবে আলহাজ্ব সুলতান আনোয়ারা ফাউন্ডেশন এর মাধ্যমেই ঐ বৃত্তি প্রদান কার্যক্রম এখনো চালিয়ে আসছেন। এই প্রকল্পের আওতায় তিনি প্রতি বছর ৩য়, ৪র্থ ও ৫ম শ্রেণীর ২৫ জন করে ৭৫ জন এবং ৬ষ্ঠ, ৭ম ও ৮ম শ্রেণী থেকে ২০ জন করে ৬০ জন ছাত্র-ছাত্রীকে বৃত্তি প্রদান করে থাকেন। শিক্ষা ক্ষেত্রে তাঁর এই অনবদ্য ভূমিকা সত্যিই প্রশংসনীয়।

তিনি বসুরহাটের অন্যতম শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বসুরহাট একাডেমীর পরিচালক ও বসুরহাট নার্সিং হোমের প্রতিষ্ঠাতা পরিষদ সদস্য। এ দুটি প্রতিষ্ঠানের একটি শিশুদের পড়ালেখা ও সঠিকভাবে গড়ে ওঠা এবং অপরটি এলাকার লোকজনকে সঠিক ও সল্পমূল্যে চিকিৎসাসেবা দিয়ে আসছে।

মোহাম্মদ কাজলের সমাজ সেবার আরেক অন্যতম নিদর্শন বায়তুন নাজাত জামে মসজিদ। গ্রাম বাংলার ধর্মপ্রাণ মুসলমানদেরকে ইবাদত-বন্দেগীর মাধ্যমে আল্লাহর সান্নিধ্য লাভের সুযোগ প্রদানের প্রত্যয়ে তিনি উত্তর পশ্চিম চরকাঁকড় গ্রামের (২নং ওয়ার্ড) কামলারপুল নামকস্থানে প্রায় ৪০ লাখ টাকা ব্যয়ে নির্মাণ করেন অত্যাধুনিক সুযোগ-সুবিধা সম্পন্নবায়তুন নাজাত জামে মসজিদ কমপ্লেক্স

এছাড়াও স্বীয় জন্মস্থান কোম্পানীগঞ্জের সাহায্য প্রার্থী সকল দরিদ্র জনগণের ডাকে তিনি থাকেন সদা জাগরুক। মেয়ের বিয়ের জন্য কন্যা-দায়গ্রস্থ পিতা-মাতার আহ্বানে তার সাহায্যের হাত থাকে উন্মুক্ত। এলাকার অসহায় ও দরিদ্রদের শিক্ষা ও চিকিৎসার জন্য তিনি সাধ্যানুযায়ী আর্থিক সাহায্য করে আসছেন অকাতরে। উদার মনের এই তরুণ যুবক সুদূর আমেরিকাতেও আঞ্চলিক সংগঠন সমূহের সাথে সম্পৃক্ত থেকে দেশমাতৃকার ও প্রবাসী বাংলাদেশীদের সার্বিক সেবা প্রদান করে আসছেন।

মোহাম্মদ কাজল প্রবাসের অসংখ্য সামাজিক সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে নিজেকে সম্পৃক্ত করে প্রবাসী বাঙালীদের কল্যাণে নিজেকে সর্বদা নিয়োজিত রেখেছেন। তিনি মেরিল্যান্ড বাংলা স্কুলের প্রতিষ্ঠাতা, বাংলাদেশ এসোসিয়েশন অব পিলাভেলফিয়ার প্রেসিডেন্ট, নিউইয়র্কস্থ কোম্পানিগঞ্জ সমিতির উপদেষ্টা, গ্রেটার নোয়াখালী সমিতির সদস্য, বাংলাদেশ সোসাইটি সদস্য, ওয়াশিংটন ডিসিস্থ বাংলাদেশ এসোসিয়েশনের সদস্য দীর্ঘদিন দায়িত্ব পালন করছেন।

দেশ ও দেশের দরিদ্র জনগণের পরম হীতাকাঙ্ক্ষী এই কৃর্তীমান যুবক তার স্বপ্ন পুরণে দূর্বার গতীতে এগিয়ে চলুক এবং তাঁর এই উদ্দীপনা ও কর্মচাঞ্চল্যতা এবং সাহায্যের হাত উত্তরোত্তর সম্প্রসারিত হোক।


সাপোর্টার/ নোয়াখালী ওয়েব/ জীর

No comments: