৭ ডিসেম্বর শুক্রবার নোয়াখালী মুক্ত দিবস। ১৯৭১ সালের এ দিনে এক রক্তক্ষয়ী সশস্ত্র যুদ্ধের মধ্য দিয়ে নোয়াখালী জেলা পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর কবল থেকে মুক্ত হয়েছিলো। মুক্তি সেনারা এ দিন মাইজদী পিটিআইতে রাজাকারদের শক্ত ঘাটির পতন ঘটিয়ে নোয়াখালীর মাটিতে উড়েছিলো স্বাধীন বাংলাদেশের বিজয় পতাকা। জেলা শহর মাইজদী কোর্ট এবং আশপাশের জনপদ একাত্তরের এ দিনে ভোর না হতেই বিজয়ের আনন্দে জয়বাংলা শ্লোগানে মুখরিত হয়ে উঠেছিলো। ২৫ মার্চের পর মুক্তিযোদ্ধারা প্রায় একমাস নোয়াখালীকে মুক্ত রাখতে সক্ষম হয়েছিলো। এরপর প্রতিপদে বাধা পেয়ে বহু কষ্টে পাকিস্তানীরা ২৩ এপ্রিল নোয়াখালী দখল করে নেয়। এরপর দেশের অভ্যন্তরে এবং ভারত থেকে পূর্ণাঙ্গ প্রশিক্ষণ নিয়ে আবার অস্ত্র হাতে মাঠে নামে মুক্তিযোদ্ধারা। সাথে ছিল এফএফ ও বিএলএফ। অনেক রক্ত আর আত্মত্যাগের বিনিময়ে ৪ ডিসেম্বর সমস্ত পরিকল্পনা চুড়ান্ত করে ৫ ডিসেম্বর মুক্তিযোদ্ধাদের সব দল এক সাথে মাইজদী কোর্ট আক্রমন করে। পাকিস্তানী হানাদার বাহিনী মুক্তিবাহিনী কতৃক শহর ঘিরে ফেলার সংবাদ পেয়ে উত্তর দিক দিয়ে পালিয়ে বেগমগঞ্জ-সোনাইমুড়ি হয়ে লাকসাম অতিক্রম করে কুমিল্লা ক্যান্টেনমেন্টে আশ্রয় নেয়। কিন্তু জেলার বিভিন্ন ক্যাম্পে দুই শতাধিক রাজাকার পিটিআই ক্যাম্পে থেকে যায়। তাদের পরাভূত করতে দুই দিন যুদ্ধ করতে হয়। অবশেষে ৭ ডিসেম্বর মুক্তিযোদ্ধারা নোয়াখালীর মুক্ত আকাশে উড়িয়ে দেয় স্বাধীন বাংলাদেশের বিজয় পতাকা। এ উপলক্ষে নোয়াখালী কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে ১১দিন ব্যাপী মুক্তিযুদ্ধের বিজয় মেলা শুরু হচ্ছে শুক্রবার (৭ ডিসেম্বর) থেকে। মুক্ত নোয়াখালী স্মারকস্তম্বে শুক্রবার বিকাল ৩টায় এ মেলার উদ্বোধন করবেন কোম্পানীগঞ্জের বাঞ্চারামযুদ্ধে শহীদ ওহিদুর রহমান অদুদের বড়ভাই মোঃ বদিউর রহমান ও বৃহত্তর নোয়াখালী মুজিব বাহিনীর কমান্ডার মুক্তিযোদ্ধা মাহমুদুর রহমান বেলায়েত। অনুষ্ঠানে সাবেক এমপি ফজলে এলাহীর সভাপতিত্বে প্রধান অতিথি থাকবেন নোয়াখালী জেলা প্রশাসক মোঃ হাবিবুল কবির চৌধুরী। মেলা পরিচালনার জন্য নোয়াখালী কামন্ডার মোজাম্মেল হক মিলনকে আহবায়ক ও মুক্তিযোদ্ধা অধ্যাপক মোয়াররফ হোসেনকে যুগ্ম আহবায়ক করে জেলার সাংবাদিক, সাহিত্যিক, রাজনীতিবিদ এর সমন্বয়ে একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে। মেলায় অর্ধ শতাধিক স্টলে মুক্তিযুদ্ধের বিভিন্ন মুহুর্তকে উপস্থাপন করা হয়েছে। মেলায় প্রতিদিন মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিচারণ ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন থাকবে বলে জানিয়েছেন আয়োজকরা। আজ (শুক্রবার, ৭ ডিসেম্বর) কোম্পানীগঞ্জে ও মুক্ত দিবস। এ উপলক্ষে উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদ বিভিন্ন কর্মসূচি হাতে নিয়েছে। উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার মুক্তিযোদ্ধা আবু নাছের জানান, শুক্রবার সকাল ৭টায় ১৬ নাম্বার সুইচ গেইটে মুক্তিযোদ্ধাদের কবর জেয়ারত ও পূষ্পমাল্য অর্পন, ১০টায় র্যালী শেষে উপজেলা শহীদ মিনারে পূষ্পমাল্য অর্পন ও আলোচনা সভা করবেন। ১৯৭১ সালের এ দিনে মুক্তিযোদ্ধারা বর্তমান কোম্পানীগঞ্জ থানায় স্থাপিত রাজাকার ক্যাম্পে আক্রমন করে পাকমিলিশিয়া বাহিনীর ৯০জন সশস্ত্র সদস্যকে আত্মসমর্পনে বাধ্য করে কোম্পানীগঞ্জকে মুক্ত ঘোষনা করে। এর আগে ৬ ডিসেম্বর মুক্তিযুদ্ধের সহযোগী দেশ ভারত বাংলাদেশকে স্বীকৃতি দিলে ওই রাতেই এ অঞ্চলের মুক্তিযোদ্ধারা রাজাকার ক্যাম্পগুলোতে আক্রমন করে হানাদার বাহিনীর সদস্যদেরকে পরাজিত করে। সেই থেকে ৭ ডিসেম্বর কোম্পানীগঞ্জের ইতিহাসে একটি অবিস্মরনীয় দিন হিসাবে পালিত হয়ে আসছে। সশস্ত্র সংগ্রামের স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে ওই লড়াইয়ে অংশগ্রহণকারী ও ডেপুটি কমান্ডার মুক্তিযোদ্ধা খিজির হায়াত খান বলেন, ১৯৭১সালের ৪ সেপ্টেম্বর এ অঞ্চলের কমান্ডার আব্দুর রাজ্জাকের নেতৃত্বে মুক্তিযোদ্ধারা বাংলাবাজারে অভিযানে যায়। কিন্তু পাকমিলিশিয়ারা মুক্তি বাহিনীর আগমন বার্তা পেয়ে স্থান ত্যাগ করে ১৪নাম্বার সুুইচ-এ বাঞ্চারাম রাস্তার মাথায় বেড়ীবাঁধের উপর ওঁতপেতে থাকে এবং রাজ্জাকের নেতৃত্বাধীন মুক্তিযোদ্ধারা ফিরে আসার সময় অতর্কিতে হামলা চালায়। এতে অংশ গ্রহণকারী ১১জন বীর যোদ্ধার মধ্যে ৬জনই ঘটনাস্থলে নিহত হয়। নিহত ৬জন মুক্তিযোদ্ধার মধ্যে বেগমগঞ্জের ছালেহ আহম্মদ মজুমদার, আখতারুজ্জামান লাতু, সোনাপুরের আবদুর রব বাবু, সিরাজপুরের ইসমাইল এবং মুছাপুরের মোস্তফা কামাল ভুলুর লাশ ১৬নং স্লুইচে দাফন করা হয়। এ ছাড়া নিহত ফারুকের লাশ নদীতে পড়ে ভাটার টানে চলে যাওয়ায় পাওয়া যায়নি বলে তিনি জানান।
Saturday, December 29, 2007
Subscribe to:
Posts (Atom)