Sunday, August 17, 2008

হ্যাকার আক্রান্ত নোয়াখালী ওয়েব! সাইবার ক্রাইমের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া জরুরী


১৫ আগষ্ট জাতীয় শোক দিবস । অনলাইন পত্রিকা নোয়াখালী ওয়েব এর জন্যও এটি একটি কালো দিবস। ২০০৭ সালের এদিনে নোয়াখালী ওয়েব স্থানীয় ও আন্তর্জাতিক একটি হ্যাকার চক্রের কবলে পড়ে আক্রান্ত হয়েছিল। সেদিন আসলে কি ঘটেছিল তা আজকের নোয়াখালী ওয়েবের অগনতি পাঠকের কাছে অজানা। পাঠকরা যাতে বিষয়টি সঠিকভাবে জানতে পারে এবং এ বিষয়ে সতর্ক থাকতে পারে সেজন্য সেদিনের ঘটনা নিয়ে লিখেছেন, মোহাম্মদ মোস্তাফিজুর রহমান-

২০০৭ সালের ১৫ আগষ্ট বুধবার দেশীয় কিছু চোর আর আন্তর্জাতিক একজন হ্যাকারের কবলে পড়ে নোয়াখালী ওয়েব। জানা যায়, ঘটনার দিন সন্ধায় নোয়াখালী ওয়েব’র সম্পাদকের ব্যক্তিগত ইমেইল এড্রেসটি হ্যাকিং (চুরি) হয়ে যায়। যেহেতু এই ইমেইল এড্রেসটি সম্পাদকদের মালিকানাধীন তথ্য প্রযুক্তি বিষয়ক প্রতিষ্ঠান টেকনোল্যান্ডের ডোমেইন এবং হোস্টিং কোম্পানীতে এডমিন ইমেইল হিসাবে ব্যবহৃত সেহেতু টেকনোল্যান্ডের ডোমেইন সাইট এবং হোস্টিং এর কন্ট্রোল ও হ্যাকার এর কবলে পড়ে। এতে করে নোয়াখালী ওয়েব এবং নোয়াখালী ওয়েব অনলাইন গ্রুপ সহ টেকনোল্যান্ডের তৈরী করা বেশ কিছু কর্পোরেট ওয়েবসাইট বন্ধ হয়ে যায়। যাদের মধ্যে বাংলাদেশের অন্যতম একটি সংগঠন বাংলাদেশ ক্যবল অপারেটর এসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (কোয়াব), বাংলাদেশ ক্যাবল টিভি দর্শক ফোরাম, ট্রান্স কন্টিনেন্টাল শিপিং লাইন লিমিটেড, রাইটক্লিক লিমিটেড, এ্যালোহা আইশপ, ডব্লিও এনবি নিউজ ইত্যাদি। হ্যাকার কতৃক আক্রান্ত হওয়ার পর সবগুলো ওয়েব সাইট এর ডাটাবেইজ মুছে ফেলে দিয়ে পর্ণো ওয়েব সাইট লিংক করে দেয়া হয় সেদিন। এতে করে করে একদিকে যেমন লক্ষ লক্ষ টাকার ক্ষতি হয়েছে পাশাপাশি পর্ণোসাইট প্রদর্শিত হওয়ায় ওয়েবসাইট গুলোর সাথে জড়িত ভিজিটররা বিভ্রান্ত হয়েছে। এছাড়া ঐ সময় যারা এ ওয়েবসাইটগুলো ব্রাউজ করছিলেন তাদের স্ব স্ব কম্পিউটার ভাইরাস আক্রান্ত হয়েছিল। আরেকটি ব্যাপার ছিল হ্যাকিং হওয়া ইমেইলটি ব্যবহার করে টেকনোল্যান্ড এর সকল ক্লাইন্ট , নোয়াখালী ওয়েব এর সকল পাঠক এবং হ্যাকিং হওয়া ইমেইলের মধ্যে স্টোরেজ করা সকল ঠিকানায় একটি ইমেইল প্রেরণ করা হয় সেদিন। যাতে টেকনোল্যান্ড এর প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ও নোয়াখালী ওয়েবের সম্পাদক সম্পর্কে বিভ্রান্তি চড়ানো হয়। শুধু তাই নয় ইমেইল এর সাথে এমন একটি লিংক প্রেরণ করা হয়েছিল সেদিন যাতে ক্লিক করা মাত্র মেইল প্রাপকের কম্পিউটার ভাইরাস দ্বারা আক্রান্ত হয়েছিল। তখন এ ব্যাপারে পল্টন থানায় একটি সাধারণ ডায়েরী করা হয়েছিল, যার নং ১১০১, তারিখ : ১৮/১/২০০৭ ইং এবং ১৯/৮/২০০৭ ইং তারিখে র‌্যাব-৩ এর কাছে একটি লিখিত অভিযোগ দায়ের করা হয়েছিল। এছাড়া সেনাবাহিনী প্রধান জনাব জেনারেল মইন উ. আহম্মেদ এর দৃষ্টি আকর্ষণ করে চিঠি দেয়া হয়েছিল সেদিন। ২১ আগষ্ট দৈনিক যুগান্তর এবং ২২ আগষ্ট দৈনিক আমাদের সময়ে এ সংক্রান্ত সংবাদ বিশেষ গুরুত্ব সহকারে প্রকাশিত হয়েছিল। থানার সাধারণ ডায়েরী এবং র‌্যাবের কাছে দেয়া লিখিত অভিযোগের বক্তব্য অনুসারে যে বিষয়টি তুলে ধরা হয়েছিল তার বক্তব্য ছিল, ‘কিছুদিন ধরে নোয়াখালীর একটি বেসরকারী উন্নয়ন সংস্থার প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা জনাব নুরুল আলম মাসুদ নোয়াখালী ওয়েব সম্পর্কে বিভিন্ন জনের কাছে বিষেদাগার ছড়িয়ে আসছেন। সমপ্রতি নোয়াখালীর আরেকটি উন্নয়ন সংস্থা এনআরডিএস এর প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তার ছেলে জনাব সুমিত আওয়াল নোয়াখালী যান এবং বিভিন্ন বিষয় নিয়ে নুরুল আলম মাসুদের সাথে বৈঠক করেন বলে বিশ্বস্ত সূত্রে জানা গেছে। এছাড়া জনাব সুমিত আওয়াল নিজেও নুরুল আলম মাসুদের সাথে বিভিন্ন বিষয়ে সমঝোতার কথা নোয়াখালী ওয়েব এর সম্পাদককে জানান। নোয়াখালী থেকে ফিরে আসার পর জনাব সুমিত আওয়াল আহমেদ নিতুল নামে পূর্ব পরিচিত আরেকজন ছেলে (ইসলামিক ফাউন্ডেশন এর ডিপুটি পরিচালক এর ছেলে) সহ ঘন ঘন নোয়াখালী ওয়েব অফিসে আসতে থাকেন এবং বিভিন্ন ছলছূতায় অফিসের কম্পিউটারে ইন্টারনেট ব্যবহার করেন। বিষয়টি নোয়াখালী ওয়েবের সম্পাদকের কাছে সন্দেহজনক মনে হলেও সৌজন্যের খাতিরে কিছু বলতে পারেননি। সর্বশেষ তারা যেদিন এসেছিলেন তার কিছুদিন পর ডেভিড রিক্যাচ নামে একজন আমেরিকান নোয়াখালী ওয়েব এ বিজ্ঞাপন দেয়ার কথা বলে সম্পাদক বরাবর একটি মেইল করে। সম্পাদক একটি অফার লেটার প্রেরণ করলে উক্ত ডেভিড জানায় সে নোয়াখালী ওয়েবের উন্নয়নের জন্য বিজ্ঞাপন দিবে। ঘটনার দিন সম্পাদক যখন বুঝতে পারে বিষয়টা সম্পূর্ণ মিথ্যা তথক্ষনে আন্তর্জাতিক হ্যাকার ডেভিড অনেককিছু তার দখলে নিয়ে নেয়। মিঃ সুমিত ব্যক্তিগত জীবনে ওয়েব হোস্টিং এর ব্যবসা করে (সরকারী অনুমোদন বিহীন প্রতিষ্ঠান)। বাংলাদেশে যারা ইন্টারনেট এক্সপার্ট তাদের মধ্যে মিঃ সুমিত এবং তার সহযোগী আহমেদ নিতুল অন্যতম। অবশ্য তাদের এ মেধা ভালো কোন কাজে ব্যবহার করা হয়না। উল্লেখ্য, মিঃ সুমিত এবং আহম্মেদ নিতুল বাংলাদেশে ইন্টারনেট হ্যাকার (চোর) দের যে গ্রুপ রয়েছে তার সক্রিয় সদস্য। যারা আবার আন্তর্জাতিক ক্র্যাডিট কার্ড হ্যাকার চক্রের সাথেও জড়িত বলে ধারণা করা হয়। ইন্টারনেটে সার্চ করলে তাদের সম্পর্কে অনেক বিস্তারিত তথ্য জানা যাবে। এছাড়া মিঃ সুমিত নোয়াখালী গ্রুপ নামে একটি ইয়াহু গ্রুপ পরিচালনা করে আসছেন ২০০৪ সাল থেকে। এদিকে নোয়াখালী ওয়েব গ্রুপ ২০০৬ সালে শুরু করলেও কার্যক্রম এবং সদস্যদের দিক দিয়ে নোয়াখালী গ্রুপ থেকে অনেকদূর এগিয়ে যায়। নোয়াখালী ওয়েব এবং নোয়াখালী ওয়েব অনলাইন গ্রুপের সাফল্যে ইর্ষাকাতর হয়ে এবং অভিযুক্ত নুরুল আলম মাসুদের প্ররোচণায় ও আর্থিক সহায়তায় মিঃ সুমিত এ ধরনের ধ্বংসাত্বক কার্যক্রমে লিপ্ত হয়েছে বলে সন্দেহ করা হয়। এক্ষেত্রে মিঃ সুমিত যেহেতু হ্যাকার চক্রের সাথে জড়িত সেহেতু আন্তর্জাতিক হ্যাকার ডেভিড এর সহায়তা নিয়েছে বলে ধারণা করা হয়। এছাড়া আহম্মেদ নিতুল নামে ছেলেটি, সে তথ্য পাচার এর দায়িত্বে ছিল বলে সম্পাদক মনে করেন। এ ঘটনার সময় প্রাণের নির্বাহী প্রধান নুরুল আলম মাসুদ ঢাকায় অবস্থান করছিলেন এবং বিভিন্ন জনকে ফোন করে ‘নোয়াখালী ওয়েব’ এর হ্যাকিং এর খবরটি দেয়ার ব্যাপারে উৎসাহী হয়ে উঠেন। এদিকে যেসময় নোয়াখালী ওয়েব সহ নোয়াখালী ওয়েব অনলাইন গ্রুপ আক্রান্ত হয় ঠিক একই সময়ে মিঃ সুমিত এর পরিচালনাধীন নোয়াখালী গ্রুপ এর নাম পরিবর্তন করে নোয়াখালী অনলাইন গ্রুপ রাখা হয় যা নোয়াখালী ওয়েব অনলাইন গ্রুপ এর সাথে সাঞ্জস্যপূর্ণ। ঘটনার আগে মিঃ সুমিত কারণে অকারণে নোয়াখালী ওয়েব অফিসে আসলেও ঘটনার পর একবার ও নোয়াখালী ওয়েব অফিসে আসেননি কিংবা সম্পাদককে ফোন করে সমবেধনাটুকুও জানাননি। এতে করে প্রতিয়মান হয় নোয়াখালী ওয়েব , নোয়াখালী ওয়েব অনলাইন গ্রুপ এবং অন্যান্য সাইটগুলো হ্যাকিং (চুরি) এর ব্যাপারে মিঃ সুমিত আওয়াল এবং মিঃ নুরুল আলম মাসুদ, আহম্মেদ নিতুল সম্পূর্ণ রুপে জড়িত। যেহেতু বাংলাদেশে কোন সাইবার ল' (আইন) নাই সুতরাং জড়িতদের বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা নেয়া যায়নি।
‘নোয়াখালী ওয়েব এর মত একটি সামাজিক সেবামূলক সাইট বন্ধ করে দেয়ার চেষ্টা বৃহত্তর নোয়াখালীবাসীর মানুষদের বিরুদ্ধে একটি আঘাত ছিল সেদিন। শুধু নোয়াখালী ওয়েব নয়, পরবর্তীতে বাংলাদেশ কম্পিউটার সোসাইটির ওয়েবসাইট সহ বেশকিছু ওয়েবসাইট আক্রান্ত হওয়ার খবর পত্রিকায় প্রকাশিত হয়েছিল। কয়েকমাস আগে এক আন্তর্জাতিক সেমিনারে বাংলাদেশে সাইবার ক্রাইমের ভয়াবহতা তুলে ধরা হয়েছিল। সে থেকে বোঝা বাংলাদেশ অনেক বেশি সাইবার হুমকির মুখে রয়েছে। এতকিছুর পরও আমাদের সরকারের বিষয়টা নিয়ে এখনো টনক নড়েনি। এমতাবস্থায় সাইবার অপরাধীদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় আইন প্রণয়ন সহ পর্যাপ্ত ব্যবস্থা না নিলে বাংলাদেশ যেকোন সময় সাইবার বিপর্যয়ের মুখে পড়বে বলে আশংকা বিশেষজ্ঞ মহলের। -ডেস্ক রিপোর্ট, নোয়াখালী ওয়েব।