Monday, October 8, 2007

অন্তহীন সমস্যায় জর্জরিত সোনাইমুড়ী সাব-রেজিস্ট্রি অফিস, কতৃপক্ষ নজর দিবেন কি?



সাইফুল্যাহ কামরুল : জীর্ণশীর্ণ অফিস কার্যালয়, প্রয়োজনীয় জনবলের অভাবসহ নানাবিধ সমস্যায় জর্জরিত সোনাইমুড়ী উপজেলার সাব-রেজিস্ট্রি অফিসটি। ধূঁকে ধূঁকে যার সমস্ত কাঠ টিন ঝরে পড়ছে। শত বছর পার হয়ে গেলে ও এই সাব-রেজিস্ট্রি অফিসে ছিঁটে ফোটা উন্নয়নের কোন ছোঁয়া লাগেনি। অপরদিকে এই অফিসের নিরাপত্তা বেস্টনি না থাকায় স্থানীয় এক শ্রেনীর ভূগ্রাসী চক্র দিনদিন যেমন এর মূল্যবান সম্পত্তি দখল করার প্রতিযোগিতায় নেমে পড়েছে অপরদিকে অরক্ষিত স্থানটিতে দিনে রাতে মাদক ব্যবসায়ী ও সেবীদের নিরাপদ আস্তানায় পরিণত হয়েছে। জানা গেছে, ১৯০৬ সালে প্রায় ১ একর ৮৪ শতাংশ ভূমির ওপর সোনাইমুড়ী সাব-রেজিস্ট্রি অফিসটি স্থাপিত হয়। বর্তমানে এর আওতায় নবগঠিত সোনাইমুড়ী উপজেলার ১০টি ইউনিয়ন ও ১টি পৌরসভার সকল জমি ক্রয়-বিক্রয় কাজ সম্পাদন করা হয়। প্রতি মাসে কয়েকশ' দলিলের কাজ সম্পাদন করে সরকারি কোষাগারে লাখ লাখ টাকা রাজস্ব জমা দিলে এর ভাগ্যে সিকি পয়সার উন্নয়নের ছোঁয়া লাগেনি। বেশ কয়েকবার সোনাইমুড়ী সাব -রেজিস্ট্রি অফিসের জীর্ণশীর্ণ টিন শেড দিয়ে তৈরী কার্যালয়ের স্থলে নতুন পাকা ভবন নির্মানের জন্য টাকা বরাদ্দ করে সরকার। কিন্তু পরে সেই বরাদ্দকৃত টাক পাশ্ববর্তী চাটখিল উপজেলার সাব-রেজিস্ট্রি অফিস ভবনের জন্য নিয়ে যাওয়া হয়। এরপর আবার সাব-রেজিস্ট্রি অফিসের নিরাপত্তা বেস্টনি নির্মানের জন্য টাকা বরাদ্দ করা হলেও সেই টাকা পাশ্ববর্তী সেনবাগ উপজেলা রেজিস্ট্রি অফিসের জন্য নিয়ে যাওয়া হয়। এভাবে বার বার টাকা বরাদ্দ আসলেও রাজনৈতিক ব্যক্তিদের প্রভাবে সোনামুড়ী সাব-রেজিস্ট্রি অফিস রয়ে গেছে অবহেলিত। পাশ্ববর্তী সকল উপজেলার সাব-রেজিস্ট্রি অফিসগুলো পাকা ভবন হলেও এখানকার অফিসটি জীর্ণশীর্ণ টিনশেডেই রয়ে গেছে। অথচ এর বছরের রাজস্ব আয় অন্যান্যদের চেয়ে কম নয়। পুরাতন টিনশেড ঘরে বর্তমানে এখানে যাবতীয় কাজ সম্পাদন করতে কর্মকর্তা- কর্মচারীদের হিমশিম খেতে হচ্ছে। একটু বৃষ্টি হলে পানিতে এখানকার মূল্যবান দলিলপত্র ভিজে নষ্ট হয়ে যায়। স্টোর রুম না থাকায় প্রয়োজনীয় দলিলপত্র যেখানে সেখানে রাখার কারনে দৈনন্দিন যাবতীয় কাজ করতে সকলকে সমস্যায় পড়তে হয় এবং মূল্যবান দলিলপত্রও নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। মাঝে মধ্যে এখানের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা চাঁদা তুলে সামান্য কিছু কাজ করে থাকেন। বর্তমানে এ অফিসে ২৫ জন দলিল সম্পাদনের কাজ করার কাজে নিয়োজিত থাকলেও তার মধ্যে ১৯ জন নকলনবীশ অস্থায়ী অবস্থায় আছে। এই অস্থায়ী নকলনবীশরা নানাবিধ কস্টে বসে কাজ করে থাকে। এ ব্যপারে সাব-রেজিস্ট্রি অফিসের অস্থায়ী নকলনবীশ ও সোনাইমুড়ী পৌরসভার কমিশনার বদরুল আলম জানান, স্থাণীয় বিভিন্ন সময়ে নির্বাচিত সাংসদদের ব্যর্থতার কারনে বরাদ্দকৃত টাকা অন্যত্র নিয়ে গেছে। তিনি আরো জানান, বিশাল এ সম্পত্তির নিরাপত্তা বেস্টনী না থাকায় স্থাণীয় এক শ্রেনীর ভূমি লিপ্সু দখলদার চক্র দিন দিন এই সাব-রেজিস্ট্রি অফিসের মূল্যবান সম্পত্তি দখল করার প্রতিযোগিতায় নেমে পড়েছে। অরক্ষিত এই এলাকায় দিনে ও রাতে নানা ধরনের অসামাজিক কার্যকলায় ও মাদক সেবীদের জমজমাট বেচাকেনার স্থানে পরিনত হয়েছে। অপর নকল নবীশ মাইনউদ্দীন জানান, বিভিন্ন খাত থেকে প্রতিমাসে প্রায় অর্ধকোটি টাকার ও বেশী এই রেজিস্ট্রি অফিস থেকে সরকারি কোষাগারে জমা দেয়া হয়। অতচ এর অবকাঠামোগত কোন উন্নয়ন এ পর্যন্ত হয়নি। সোনাইমুড়ী সাব-রেজিস্ট্রার অমরেন্দ্র লাল ভৌমিকের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, এর উন্নয়ন কাজের জন্য বার বার বিভিন্ন মন্ত্রনালয়ে পত্র দেয়া হয়েছে। কিন্তু এখনো পর্যন্ত কোন সাড়া পাওয়া যায়নি। তিনি আরো জানান, অমানবিক কষ্ট করে তারা এখানে সকলে কাজ করছেন। এছাড়া জমি রেজিস্ট্রি করতে আসা বৃদ্ধ পুরুষ ও মহিলাদের সবচেয়ে বেশী কষ্ট করতে হয়। তাদের বসার জন্য কোন বিশ্রামাগার, টয়লেটের ব্যবস্থা না থাকায় চরম দূর্ভোগ পোহাতে হয়। তিনি এই কার্যালটির যাবতীয় উন্নয়নের জন্য বর্তমান সরকারের জরুরী হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।

No comments: